সিবিএন ডেস্ক:
সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে ৬০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে। দেশটি বাংলাদেশের কাছ থেকে আরও ১ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ নিতে চায়। অপরদিকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের কাছ থেকে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার দেশের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান।
জানা গেছে, সৌদি আরব সাবমেরিন ক্যাবলের লাইফটাইম ধরে ব্যান্ডউইথ চায়। মালয়েশিয়া চায় ১০ বছরের জন্য। দুই পক্ষ সম্মত হলে চুক্তি হতে পারে। এজন্য মাস দুয়েক সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মশিউর রহমান বলেন, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া যে ব্যান্ডউইথ নিতে চায় তা আমাদের আন-ইউজড ক্যাপাসিটি, যাকে বলা হয় ‘ডার্ক ক্যাপাসিটি’। এই ক্যাপাসিটি ইনঅ্যাক্টিভ অবস্থায় রয়েছে, ওরা অ্যাক্টিভেট করে নেবে। আমাদের কিছুই করতে হবে না। সৌদি আরব এখন যা নিচ্ছে, আরও যা নিতে চায় এবং মালয়েশিয়া যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তা নিলেও দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনও প্রভাব পড়বে না।
জানা যায়, সৌদি আরব ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের জন্য বাংলাদেশকে দিয়েছে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ বাবদ বাংলাদেশ পাবে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার। চুক্তি হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইফটাইম হিসেবে। সেই হিসেবে চুক্তির মেয়াদ দাঁড়াতে পারে ২০ বছর।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৬)ক্যাপাসিটি হবে ১২ টিবিপিএস টেরাবাইটস পার সেকেন্ড)। ৬ টিবিপিএস সিঙ্গাপুর প্রান্তে, অবশিষ্ট ৬ টিবিপিএস ফ্রান্স প্রান্তে থাকবে। ফলে দেশে কোনও ব্যান্ডউইথের ঘাটতি থাকবে না। উদ্বৃত্ত ও অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিভিন্ন দেশে রফতানির সুযোগ থাকছে।
পশ্চিমে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ ২ দশমিক ৫ টেরা:
বাংলাদেশ বর্তমানে দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত, সি-মি-উই-৪ এবং সি-মি-উই-৫। অবস্থানগত ও অঞ্চল ভিত্তিতে সাবমেরিন ক্যাবলের দুটি অংশ- পূর্ব ও পশ্চিম। পূর্ব অংশই বাংলাদেশের বেশি কাজে লাগে। এই অংশে সিঙ্গাপুরের অবস্থান। দেশটি এশিয়ার বিজনেস হাব হিসেবে পরিচিত। ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউবের ডাটা সেন্টার সিঙ্গাপুরে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক সিঙ্গাপুর দিয়েই যায়। ফলে পূর্ব অংশটি বহুল ব্যবহৃত হলেও পশ্চিমাংশের ব্যান্ডউইথ পুরোপুরি অব্যবহৃত থাকে। যার পরিমাণ ২ দশমিক ৫ টিবিপিএস (টেরাবাইটস পার সেকেন্ড)। অথচ এই ব্যান্ডউইথ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারকে প্রতি বছর বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। এসব কারণে সরকার পশ্চিমাংশের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমাংশের দেশগুলোরও আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নেওয়ার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) অপারেটর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্ব অংশ দিয়ে যদি ডাটা ট্রাফিক যায় ৯৯ শতাংশ তাহলে পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে যায় মাত্র ১ শতাংশ। ওইদিকে বাংলাদেশের যাওয়াই পড়ে না। ওই প্রান্তের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রি করলে তা দেশের রফতানি আয় হিসেবে গণ্য হয়, সাবমেরিন ক্যাবলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচেরও অর্থ আসে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত পশ্চিম প্রান্তের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে দেওয়া।
ফ্রান্স নিলো ১৩ জিবিপিএস:
সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম প্রান্ত থেকে ফ্রান্স ১৩ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। ১ অক্টোবর (শুক্রবার) থেকে ফ্রান্স ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ ক্যাবলের লাইফ টাইম পর্যন্ত বলে জানা গেছে।
ভারত নিচ্ছে ১০ জিবিপিএস:
ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য আবারও ব্যান্ডউইথ নিতে শুরু করেছে। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটি ব্যান্ডউইথ নিলেও মাঝে কিছুদিন তা বন্ধ ছিল। নতুন করে আবার চুক্তি হয়েছে সেপ্টেম্বরে। নতুন চুক্তিতে ভারত আগামী তিন বছর বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করবে।
আরও ব্যান্ডউইথ চায় অনেক দেশ:
ভুটান বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে চায়। যেকোনও সময় সমঝোতা চুক্তি হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ আশাবাদী, ভুটান বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নিলে নেপালও আগ্রহী হবে। চায়না টেলিকম, ফ্রান্সের অরেঞ্জ টেলিকমও বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে বিএসসিসিএল সূত্রে জানা গেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।